ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে যৌতুকের জন্য আয়েশা (২১) নামে এক গৃহবধূকে স্বামীর পরিবারের লোকজন পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মারধর করা হলেও সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে শুক্রবার ৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে গৃহবধূ আয়েশার বাবা আব্দুল হাই হরিপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবার দুপুরে থানা পুলিশ উপজেলার ভেটনা গ্রামে অভিযান চালিয়ে আয়েশার স্বামী আমিরুল ইসলাম (৩০) ও শাশুড়ি শেফালীকে (৫০) আটক করেছে।
আটককৃত আমিরুল উপজেলার ২নং আমগাও ইউনিয়নের ভেটনা গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে ও শেফালী মোজাম্মেল হকের স্ত্রী। নিহত আয়েশা একই উপজেলার হরিপুর সদর ইউনিয়নের খোলড়া গ্রামের আব্দুল হাইয়ের মেয়ে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ২নং আমগাও ইউনিয়নের ভেটনা গ্রামে নিহত গৃহবধূ আয়েশার স্বামী আমিরুল ইসলামের নিজ বাড়িতে।
আয়েশার বাবা আব্দুল হাই বলেন, গত তিনবছর আগে আমার মেয়ে আয়েশার উপজেলার ভেটনা গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে আমিরুল ইসলামের সাথে বিয়ে হয়। মেয়ের বিয়ের সময় জামাইকে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা যৌতুক হিসেবে দেই। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই আরো যৌতুক নেওয়ার জন্য আমার মেয়েকে চাপ প্রয়োগ করলে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে আরো ১ লক্ষ টাকা যৌতুক হিসেবে জামাইকে দেই। আবার কিছুদিন যাওয়ার পর পুনরায় আমার মেয়েকে, জামাই আমিরুল আরো যৌতুক নিয়ে আসতে চাপ প্রয়োগ করলে আমার মেয়ে আয়েশা অপরাগতা প্রকাশ করে। এরপর থেকেই আমার মেয়ে আয়েশার উপর তার স্বামীসহ পরিবারের লোকজন নির্মমভাবে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন শুরু করে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে যৌতুকের জন্য আমার মেয়ে আয়েশাকে তার স্বামীসহ পরিবারের লোকজন বেধরম মারপিট করে। এতে আয়েশা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বিষয়টি আমার জানতে পেরে দুপুর দুইটার দিকে মেয়ে জামাইয়ের বাড়ি ভেটনা গ্রামে যাই। মেয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রথমে রানীশকৈল হাসপাতালে নিয়ে যাই। কর্তব্যরত ডাক্তার আয়েশাকে চিকিৎসা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে সঙ্গে সঙ্গে আয়েশাকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই। হাসপাতালে পৌঁছার পর বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় আয়েশা মারা যায়।
হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুছ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আব্দুল হাই নামে এক ব্যক্তি হত্যার অভিযোগ দেন। এরই প্রেক্ষিতে শুক্রবার দুপুরে উপজেলার ভেটনা গ্রামে অভিযান চালিয়ে আমিরুল ইসলাম (৩০) ও শেফালী (৫০) নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে ও গৃহবধূর লাশ স্বামীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঠাকুরগাঁও মর্গে পাঠানো হয়েছে।